কালোজিরা পিষে তেল বের করে নিলে কার্যকারীতা অনেকগুণ বৃদ্ধি পায়।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সুন্নতী খাবার কালোজিরার ব্যবহারের অনেক উপকারীতা বর্ণিত রয়েছে। “হযরত আবূ হুরায়রাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মৃত্যু ছাড়া এমন কোন রোগ নেই কালোজিরায় যার আরোগ্যতা নেই।” (মুসলিম শরীফ: হাদীছ শরীফ নং ৫৬৬১)
অন্য বর্ণনায় বর্ণিত রয়েছে- “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন রোগ-যন্ত্রণা খুব বেশী কষ্টদায়ক হয় তখন এক চিমটি পরিমাণ কালোজিরা নিয়ে খাবে তারপর পানি ও মধু সেবন করবে।” (মুজামুল আওসাত লিত তাবরানী)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে- “হযরত কাতাদাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত আছে, প্রতিদিন ২১টি কালোজিরার ১টি পুটলি তৈরী করে পানিতে ভিজাবে এবং পুটলির পানির ফোঁটা এ নিয়মে নাসারন্দ্রে (নাসিকা, নাক) ব্যবহার করবে। প্রথমবার ডান নাকের ছিদ্রে ২ ফোঁটা এবং বাম নাকের ছিদ্রে ১ ফোঁটা। দ্বিতীয়বার বাম নাকের ছিদ্রে ২ ফোঁটা এবং ডান নাকের ছিদ্রে ১ ফোঁটা। তৃতীয়বার ডান নাকের ছিদ্রে ২ ফোঁটা ও বাম নাকের ছিদ্রে ১ ফোঁটা।”
সুন্নতী খাবার কালোজিরা ব্যবহারের উপকারিতা:
• ১৫/১৬ টি সুন্নতী খাবার কালোজিরা ছোট ১টি পিয়াজ ও ২ চামচ মধু সহ বিকালে/রাতে খেলে দৈহিক সতেজতা রক্ষা হয় ।
• হজমের সমস্যায় এক-দুই চা-চামচ সুন্নতী খাবার কালোজিরা বেটে পানির সঙ্গে খেতে থাকুন। এভাবে প্রতিদিন দু-তিনবার খেলে এক মাসের মধ্যে হজমশক্তি বেড়ে যাবে। পাশাপাশি পেট ফাঁপাভাবও দূর হবে।
• জ্বর, ব্যথা, সর্দি-কাশিতে এক চা-চামচ সুন্নতী খাবার কালোজিরার সঙ্গে তিন চা-চামচ মধু ও দুই চা-চামচ তুলসী পাতার রস মিশিয়ে প্রতিদিন একবার সেবন করুন। সুন্নতী খাবার কালোজিরা বেটে কপালে প্রলেপ দিন যদি সর্দি বসে যায় একই সঙ্গে পাতলা পরিষ্কার কাপড়ে সুন্নতী খাবার কালোজিরা বেঁধে শুকতে থাকুন, শ্লেষ্মা তরল হয়ে ঝরে যাবে।
• মায়েদের বুকের দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে প্রতিদিন রাত্রে শোবার আগে ৫-১০ গ্রাম সুন্নতী খাবার কালোজিরা মিহি করে দুধের সঙ্গে খেতে থাকুন। ইনশাআল্লাহ্ মাত্র ১০-১৫ দিনে দুধের প্রবাহ বেড়ে যাবে। এছাড়া এ সমস্যা সমাধানে সুন্নতী খাবার কালোজিরা-র ভর্তা করে ভাতের সঙ্গে খেতে পারেন।
• নিয়মিত সুন্নতী খাবার কালোজিরা খান। এটি মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দেয়। যার দরুন স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়। এর সঙ্গে এটি প্রাণশক্তি বাড়ায় ও ক্লান্তি দূর করে।
• সুন্নতী খাবার কালোজিরা লিভার ক্যান্সারের জন্য দায়ী আফলাটক্সিন নামক বিষ ধ্বংস করে। তাই যারা লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত তারা আজ থেকে খাওয়া শুরু করে দিন।
• ডায়বেটিকস্ রোগীরা এক চিমটি পরিমাণ সুন্নতী খাবার কালোজিরা এক গ্লাস পানির সঙ্গে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেয়ে দেখুন, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে একসময় ডায়বেটিকস্ কমে যাবে ইনশাআল্লাহ।
• সুন্নতী খাবার কালোজিরা যৌন ব্যাধি ও স্নায়ুবিক দুর্বলতায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য অতি উতকৃষ্ট ঔষধ।
• শুলবেদনা ও প্রসূতি রোগে সুন্নতী খাবার কালোজিরা অত্যধিক উপকারী। ব্রুনের জন্যও এটি উত্তম ঔষধ।
• মূত্রথলির পাথর ও জন্ডিস থেকে আরোগ্য লাভ করতে সুন্নতী খাবার কালোজিরা খান নিয়মিত যতবার পারেন।
• অধিক ঋতুস্রাব, মাত্রাতিরিক্ত পেশাব প্রতিরোধ করতে সুন্নতী খাবার কালোজিরার উপকারিতা অপরিসীম। এটি কৃমিনাশক।
• সুন্নতী খাবার কালোজিরা রিউমেটিক এবং পিঠে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
• নিয়মিত সুন্নতী খাবার কালোজিরা সেবনে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে সতেজ করে ও সার্বিকভাবে স্বস্থ্যের উন্নতি সাধন করে।
• ভাত, তরকারী ইত্যাদির সাথে সুন্নতী খাবার কালোজিরা মিশিয়ে খান রোগশোক থেকে দূরে থাকুন।
কালোজিরার তেলের কিছু ব্যবহার:
* কপালের দুই পাশে এবং কানের পাশে দিনে তিন-চারবার কালোজিরার তেল মালিশ করুন মাথাব্যাথা ভালো হয়ে যায়।
* চুল পড়া রোধে কালোজিরার তেল চুলের গোড়ায় নিয়মিতভাবে মালিশ করতে হয়। ২ টেবিল চামচ যয়তুন তেল ও ১ চা চামচ কালোজিরার তেল একসাথে মিশিয়ে হালকা গরম করে চুলের গোড়ায় ভালো করে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট ম্যাসাজ করে, ১ ঘণ্টা পর চুল ধুয়ে ফেলতে হয়।
* উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কালোজিরার তেল ব্যবহার করা হয়। শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানী দূর করে। হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণ করে।
* পক্ষাঘাত (প্যারালাইসিস) ও কম্পন রোগে কালোজিরার তৈল মালিশ করলে আশ্চর্যজনক ফল পাওয়া যায়।
* জ্বর, ব্যাথা, সর্দি-কাশিতে তাড়াতাড়ি ভালো ফল পেতে বুকে ও পিঠে কালোজিরার তেল মালিশ করা যায়।
* সকালে খালি পেটে ১২/১৩ ফোঁটা কালোজিরার তেল ও ১৫/১৬ ফোঁটা মধু খেলে ডায়াবেটিসের উপকার হয়।
* ১০/১২ ফোঁটা কালোজিরার তেল গরম পানিতে মিশিয়ে খেলে বাত রোগের উপকার হয়।